ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

তবু থেমে নেই প্রতারক চক্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা

নিউজ ডেস্ক ::  বিভিন্ন সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন, এমপিওভুক্তকরণ, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতিদানসহ বিভিন্ন কাজের নামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফোন করে, ই-মেইলে, এসএমএস-এ এবং চিঠির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। প্রায়শঃ এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতরগুলো। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের স্বাক্ষরে জারিকৃত গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রকারক চক্র হতে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু প্রতারক চক্র থেকে সাবধানতা অবলম্বনে মন্ত্রণালয় থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরও থেমে নেই প্রতারক চক্র। এবার ব্যানবেইসের (বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো) নাম ভাঙিয়ে টাকা দাবি করেছে একটি প্রতারক চক্র। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণে সিলেকশন কার্যক্রম পরিচালনার নামে চিহ্নিত কিছু প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দেড় হাজার টাকা করে দাবি করেছে চক্রটি। ২৫ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা চিঠিতে ডাচবাংলা ব্যাংকের মোবাইল (রকেট) একাউন্টের মাধ্যমে এ টাকা পাঠানোর কথা বলা হয়।
চট্টগ্রামের একাধিক প্রতিষ্ঠানেও এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি পেয়ে তা যাচাইয়ের জন্য মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর) আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হন সংশ্লিষ্টরা। এ তথ্য নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, এ ধরনের একটি চিঠি পেয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। কিন্তু ব্যানবেইস এরকম কোন চিঠি জারি করেনি। আমরা সেটি নিশ্চিত হয়েছি। পত্রটি ভূয়া এবং এটি প্রতারক চক্রের কাজ দাবি করে আজিজ উদ্দিন বলেন, চিঠিতে যে বিষয়ে টাকা চাওয়া হয়েছে, সেটির সাথে ব্যানবেইসের কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ সরকারিকরণের সাথে ব্যানবেইসের কোন সর্ম্পক নেই। প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তিকরণ কার্যক্রমেও এ ধরণের লোভ দেখানো হতে পারে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে সজাগ থাকার আহবান জানান মাউশির আঞ্চলিক উপ-পরিচালক।
এদিকে, প্রতারক চক্র হতে সতর্ক হতে সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের স্বাক্ষরে ২০ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ‘সমপ্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন প্রতারক চক্র সরাসরি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তার অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন, এমপিও ভূক্তকরণ, পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, শ্রেণি খোলা ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলিসহ বিভিন্ন কাজ করিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফোন করে, ই-মেইল, এসএমএস বা চিঠি পাঠিয়ে টাকা দাবি করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের পক্ষ হতে অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট ব্যক্তিগত ভাবেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে মর্মে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন কাজে টাকা প্রদানের কোন প্রয়োজন নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে যে সকল সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে, তার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ সংক্রান্ত সকল তথ্যাদি মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় এ ধরণের প্রতারক চক্র বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীন কোন প্রতিষ্ঠানের কথিত কর্মকর্তা কর্তৃক ই-মেইল, এসএমএস, ফোন এবং চিঠিপত্র কিংবা তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের ভিত্তিতে কাউকে কোন টাকা না দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হলো। কেউ কোন ধরণের সুবিধা বা টাকা চাইলেই বুঝবেন যে এটা প্রতারণা। সাথে সাথেই এ ধরণের প্রতারকদের পুলিশে সোর্পদ করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে। মন্ত্রণালয়ের পর মাউশির ওয়েবসাইটেও এ গণবিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও মাউশির এমন সতর্কতা জারির মধ্যেই সক্রিয় রয়েছে প্রতারক চক্র।
ব্যানবেইসের নাম ভাঙিয়ে দেড় হাজার টাকা করে দাবি করে ২৫ ফেব্রুয়ারি (গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর) একটি চিঠি পাঠায় প্রতারক চক্রটি। এমন একটি চিঠি আজাদীর হাতে এসেছে। চিঠিতে ব্যানবেইসের প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ বিভাগের দায়িত্বে থাকা মো. মমতাজুর রহমানের স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি জারি করা চিঠিতে বলা হয়- ‘স্মারক নং ১০০.০০.১২৫.০০০৪(১) তাং ০৫/০২/২০১৯ ইং প্রেরেতি পত্র, সুপারিশ ও ১৬/০২/১৯ ইং অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সরকারিকরণ) সিলেকশন কার্যক্রম বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) কর্র্তৃক পরিচালিত হবে। প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণে প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন নাম্বার দিয়ে সিলেকশন ফি ১৫০০ টাকা ০৫/০৩/২০১৯ ইং তারিখের মধ্যে প্রেরণ করতে হবে। সরকারিকরণের তালিকা গেজেট আকারে জেলা ও উপজেলায় প্রেরণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াও বাতলে দেয়া হয়েছে। টাকা পাঠাতে ০১৯৩৬-৪৬৩৬৫৩ (৮) এই রকেট একাউন্টটি দেয়া আছে। পেমেন্ট সম্পন্ন হলে প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন নাম্বার, প্রতিষ্ঠানের নাম ও পেমেন্ট এর ট্রানজেকশন আইডি প্রদত্ত [email protected] ই-মেইলে প্রেরণ করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে চিঠিতে। বাঁশখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা আলম সরকারও এ ধরণের একটি চিঠি হাতে পান। পরে বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আনেন।
এ ধরণের চিঠি কিংবা যে কোন ধরণের তথ্যে বিভ্রান্ত না হতে এবং কোন বিষয়ে সন্দেহ থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যাচাইয়ের অনুরোধ জানিয়েছেন মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন।

পাঠকের মতামত: